নীলফামারীতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে ভুট্টার চাষ

প্রকাশিত: ১:২৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০১৯

নীলফামারীতে চলতি রবি মৌসুমে ভুট্টার রেকর্ড পরিমাণ চাষ হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা। এবার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবারে চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নেমেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কিন্তু এবার ভুট্টা চাষ হয়েছে ২০ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়াও এবার প্যাসিফিক-১১ ও পাইওনিয়ার-৯২ জাতের ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় সম্ভাব্য গড় ফলন ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন।

অপরদিকে, গত বছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, জেলায় ১৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আগামজাতের ভুট্টার চাষ হয়েছিল। এতে ফলনের (উৎপাদন) পরিমাণ ধরা হয়েছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৫৭৮ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন পাওয়া যায় প্রায় ১০ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এবারে উৎপাদন নয় হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন বেশি ধরা হয়েছে।

কৃষিবিদরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় ভালো ফলন হবে।

নীলফামারী সদরের উত্তর হাড়োয়া সরকারপাড়া গ্রামের মো. মোকছেদ আলী (৫৩) বলেন, ‘কয়েক দফা বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জমিতে আগাম জাতের ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। প্রতি বছরই ধানের দরপতনের কারণেই কৃষকদের লোকশান গুনতে হচ্ছে। তাই ভুট্টা অল্প খরচে লাভজনক হওয়ায়, বিকল্প হিসেবে অন্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন স্থানীয়রা।’

সরকারপাড়া গ্রামের শফিয়ার রহমান (৫১) বলেন, ‘চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। কৃষি অফিসের পরামর্শে উন্নত জাতের প্যাসিফিক-১১ ও পাইওনিয়ার-৯২ ভুট্টা চাষ করেছি। এই জাতের ভুট্টায় বিঘাপ্রতি ৩৫-৪০ মণ ফলন পাওয়া যায়। বাজারে দামও ভালো রয়েছে।আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন আশা করছেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে এখন প্রতি মণ ভুট্টা ৬৮০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমি চাষ করতে (চাষ, বীজ, সার, সেচ) খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে এতে প্রায় প্রতি বিঘাতে লাভ হবে প্রায় ১৬ হাজার টাকা।’

উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের শাহ আলম বলেন, ‘গত বছর একবিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছিলাম। এবার দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের পাইওনিয়ার-৯২ ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টা চাষে সার কম লাগে। এছাড়া, সেচ, কীটনাশক ও নিড়ানি লাগে না। একেবারে কম খরচে ও স্বল্প সময়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। বর্তমান বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো রয়েছে।’

সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের ভুট্টা ব্যবসায়ী মো. এনতাজ আলী ও জেলা শহরের শাহ আলম বলেন, ‘বর্তমানে ভুট্টার জাত অনুযায়ী সাড়ে ৬০০-৭২০ টাকা দামে বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের ধকল কাটিয়ে এবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন কৃষকরা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমিগুলোতে আগামজাতের কিছু কিছু ভুট্টা ঘরে তুলছেন তারা। তবে মাস খানেক পরে পুরোদমে ভুট্টা সংগ্রহ ও মাড়াই শুরু হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মহনিস রেজা রূপম জানান, কম খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা এবার বোরো ধানের জমিতে আগাম জাতের ও অধিক ফলনশীল পুষ্টি সমৃদ্ধ দানাদার জাতীয় ভুট্টা চাষ করছেন। এছাড়াও ভুট্টার রোগবালাই দমনে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাসেম আযাদ জানান, ‘চলতি বছর বিঘাপ্রতি ভুট্টা উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৫-৪০ মণ। বাজারে ভালো দাম ও চাহিদা রয়েছে। জমিতে রোগবালাই দমনের জন্য মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’

 

সুত্র : বাসস