রাজশাহীতে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আমের গুটি

প্রকাশিত: ২:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৯

ক’দিন আগেও রাজশাহীতে আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা ছিল প্রকৃতি। মৌমাছির গুনগুন শব্দ যেন নিমন্ত্রণ দিচ্ছিল আমের মৌসুমের। এক মাসের ব্যবধানে সেসব গাছজুড়ে শোভা পাচ্ছে সবুজ আমের কাঁচা কাঁচা কড়ালি বা গুটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আমের বাগানই বেশি। রাস্তার চারপাশে যতদূর চোখ যায়, কেবলই মন জুড়ানো আমগাছ। প্রতিটি গাছেই দেখা মিলেছে আমের কড়ালি বা গুটি। এ উপজেলায় প্রতিবছর আমের ব্যাপক আবাদ হয়। মিষ্টি, স্বাদ, গুণ ও আকারে রাজশাহীর জেলার মধ্যে সেরা বাঘা উপজেলার আম। গাছের ডালে ডালে গুটি ধরেছে। আর সেই গুটিতেই স্বপ্ন বাঁধতে শুরু করেছেন চাষিরা। চলছে সাধ্য অনুযায়ী পরিচর্যা। চৈত্র-বৈশাখেই ফলবতী হয়ে উঠবে গাছ। জৈষ্ঠেই পরিপূর্ণ আমের দেখা মিলবে বাজারে। কৃষককূলে এখন চলছে তারই প্রস্তুতি।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- গাছ, পাতা, মুকুল, গুটি আর আম নিয়ে বাঁধা নানান স্বপ্নের কথা। রুস্তমপুর গ্রামের আম ব্যবসায়ী নুহু আলম সরকার জানান, গতবছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি কম হওয়ায় প্রচণ্ড খরতাপে গাছেই অনেক আম ফেটে গিয়েছিল। এবারও প্রতিটি গাছে গুটি ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাবেন তারা।

আড়ানী গোচর গ্রামের আম চাষি শহিদুল ইসলম জানান, বাঘা-চারঘাটসহ রাজশাহীর আমের ব্যবসা সফল করতে এবার স্থানীয় এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন।

আড়ানী পাঁচপাড়া গ্রামের আম চাষি আবদুল মালেক জানান, বড় ধরনের কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে লাভের মুখ দেখবেন বাঘার আম চাষিরা। এবার ৯০ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছিল। সেই মুকুল থেকে কড়ি বাঁধতেও শুরু করেছে। বর্তমানে আমের প্রায় আড়াইশ’ জাতের মধ্যে আগাম জাতের ও মধ্যম জাতের আম গাছে গুটি এসেছে। দেরিতে গুটি আসবে ফজলি, আশ্বিনাসহ বেশ কয়েকটি জাতের।

তিনি আরও জানান, আম বাগানে সারাবছর কোনো কাজ থাকে না। তবে মুকুল আসার আগে থেকে আম নামানো পর্যন্ত এর পরিচর্যা করতে হয়। ভালো ফলনের জন্য আম চাষিরা উঠে পড়ে লাগেন। তাছাড়া বাগান ইজারা নিয়েছেন এমন ব্যবসায়ীরা আরো বেশি মনোযোগী হন গাছের পরিচর্যায়।

উপজেলার আম চাষি বাদশা হোসেন জানান, আম চাষ এবং ব্যবসা উভয়ের সঙ্গেই তিনি সরাসরি যুক্ত। মূলত পাতা কেনা দিয়েই শুরু হয় আমের কেনা বেচা। বেশি পাতাওয়ালা গাছে ফলন ভালো হবে ধরে এ পাতা কেনাবেচা হয়। স্থান, ফলনের ইতিহাস আর সম্ভাব্য পরিমাণের ওপর অনুমান করে ব্যবসায়ীরা লোকজনের কাছ থেকে৩-৫ বছর চুক্তিতে গাছ কেনেন। তারপর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তিনি সেই গাছের মালিক। ফল হলেও তার, না হলেও তার।

তিনি আরও জানান, গাছ প্রতি এজন্য ৫-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় মালিককে। অবশ্য যুগ যুগ ধরে পাতা কেনার এ প্রথা চলে এলেও এখন অনেকেই ভিন্ন নীতিতে ব্যবসা করেন। আগাম পাতা কেনায় ক্ষতির শঙ্কা থাকে। তাই ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীর নিজেরাই বাগান গড়ে তুলেছেন। চাষও করছেন নিজে।

আড়ানীর আম ব্যবসায়ী নওশাদ আলী জানান, আগে আমের অন ইয়ার অফ ইয়ার থাকতো। অর্থাৎ এক বছর আম হলে অন্য বছর হতো না। কিন্তু ঋতু বৈচিত্রে ও চাষপদ্ধতির পরিবর্তনে এখন প্রতি বছরই আমের ভালো ফলন পাওয়া যায়। এজন্য সারা বছরই আম গাছের পরিচর্যা করতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লা সুলতান বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ছত্রাক জনিতরোগে আমের গুটি আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে গুটিতে রূপান্তর হওয়ার পর ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টরজমিতে আম চাষ হয়েছে।’

খোঁজ নিযে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘায় প্রায় আড়ইশ’ জাতের আম উৎপন্ন হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর,ফজলি, আম্রপলি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপুরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ।

 

সুত্র : বার্তা ২৪