এবার ঢাকায় বসেছে ‘ই-কমার্সের ডাক’ মেলা

প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০১৯
ঈদের আগমনী আবহে রাজধানীর গুলিস্তান জিরোপয়েন্টে অবস্থিত ঢাকা জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও চত্বরে) শুরু হলো দুই দিনের ই-কমার্স ডাক মেলা। শুক্রবার (১৭ মে) সকালে, জি পি ও (সভাকক্ষে) মেলার উদ্বোধন করেন ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ডাকঘর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাশু শেখর ভদ্র। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দারাজ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মোস্তাহিদল হক ও জনাব সুশান্ত কুমার মন্ডল, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত মহা পরিচালক, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এবং ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল ।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা আজ ইলিকেট্রনিক্স বা বিদ্যুতের যুগে নেই। ই-সভ্যতা থেকে অনেকটা পথ এগিয়ে এখন ডিজিটাল যুগে পৌছে গেছি।
ecab news
তিনি বলেন, ব্যবসায় বাণিজ্যের ডিজিটাল রূপান্তর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সভ্যতার বিকাশে আমরা পিছিয়ে থাকায় আমরা এতোদিন কৃষিভিত্তিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে বস্তুত ২০০৯ সাল থেকে আমরা ডিজিটাল সভ্যতায় যাত্রা শুরু করেছি। তাই এখন ঘরে বসেই চাল-ডাল থেকে সব কিছুই পাচ্ছি। দুই বছর পর ডিজিটাল রূপান্তরহীন ব্যবসায় খুঁজে পাওয়া দুস্কর হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক বিভাগ যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে, তার ফলেই ডিজিটাল কমার্স আজ গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ডাক বিভাগের মতো নিবেদিত প্রাণ কর্মী পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। তাই নাগরিকদের প্রয়োজন মিটিয়ে ডাক বিভাগ ডিজিটাল সেবাকে ঘরে ঘরে পৌছে দেবে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, যে রুপান্তরই হোক না কেন গ্রাহককে সন্তুষ্টি ছাড়া তাৎক্ষণিক লাভে কোনো ব্যবসায় স্থায়ী রূপ লাভ করবে না। ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায় সেই আস্থা অটুট রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন ব্যবসায় ডিজিটাল রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনের দক্ষতা করায়ত্ব করতে হবে। তাই প্রচলিত ব্যবস্থায় ডিজিটাল কমার্স চলবে না। ক্যাশ অন নয় ক্যাশ লেস ডেলিভারিতে এই ব্যবসায় পূর্ণতা লাভ করবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যবসায় বিষয়ে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের সচেতনতা বাড়াতে ই-ক্যাব ও ডাক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলা অব্যাহত থাকবে। বিভাগ থেকে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাশু শেখর ভদ্র বলেন, আমরা ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি। ডাক বিভাগও এর বাইরে নয়। দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত ই-কমার্স ডাক মেলা সেই বার্তাই সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ই-ক্যাব ও ডাক বিভাগের মেলবন্ধনে নাগরিক জীবন আয়াসসাদ্ধ ও পণ্য ও সেবা সহজলভ্য হবে।
মোস্তাহিদল হক বলেন, ডিজিটাল কমার্স ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপকল্পের অন্যতম অনুষঙ্গ। এই ব্যবস্থায় পণ্য ও সেবা কেবল সহজলভ্যই হয় না; গ্রাম ও শহরের দূরত্ব ঘুচে বিদ্যমান পণ্য মূল্যের পার্থক্যকেও একটি প্রতেযোগিতামূলক পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, গত প্রায় দুই মাস ধরে দেশের ছয়টি বিভাগে ই-কমার্স ডাক মেলার আয়েজন করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কেবল বরিশালে মেলা করেছি। সব বিভাগেই মেলায় ৪০টির মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। মেলার মাধ্যমে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং ডাক বিভাগের মাধ্যমে মেলবন্ধন রচিত হয়েছে। ডাক বিভাগের ই-পোস্ট সেবার মাধ্যমে ৪০ হাজারের মতো পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি পণ্যও মিসিং হয়নি।
ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল বলেন, ভবিষ্যতে ই-কমার্স এবং নগদ বাংলাদেশ ডাকবিভাগকে নেতৃত্ব দেবে। এই সেবাদুটোকে এগিয়ে নিতে পারলে সাফল্য আসবে। এজন্য ই-ক্যাব সদস্যভূক্ত ৯০০ ই-কমার্স মার্চেন্টকে ভালোভাবে সেবা দিতে পারলে ক্রেতারা আর দোকানে যাবেন না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, মানুষ সব সময় স্বস্তিতে থাকতে চায়। এর কারণেই মানুষ নতুন নতুন উদ্ভাবন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি নাগরিক জীবনে সেই স্বস্তি নিয়ে এসেছে। ই-কমার্স সেই স্বস্তি ও সুখানুভূতির মাধ্যম।
প্রসঙ্গত, ই-কামার্সের ডাক মেলার পৃষ্ঠোপোষকতা করেছে দারাজ। সহপৃষ্ঠোপোষক হিসেবে রয়েছে চালডাল.কম, রেজিন্ট্রো.কম, রকমারি.কম, প্রিয়শপ, দিনরাত্রি, এমএমইভাই, স্পিকলার, ফাইবার অ্যাটহোম, এসএসএল কমার্জ এবং মাসিক কম্পিউটার জগৎ। ১৮মে সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রেফেল ড্র বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে জাতীয় ই-কমার্স ডাক মেলা।
মেলায় মোট ৮০টি স্টল ছাড়াও ৬টি মিনি ও ৬টি প্যাভিলিয়নে বিশেষ ছাড় ও উপহারে নিজেদের পণ্য ও সেবার পসরা নিয়ে হাজির হয়েছে দারাজ, আজকের ডিল, চালডাল, প্রিয়শপ, রকমারি, দিনরাত্রি, ই-পোস্ট, স্পিকলার রেজিস্ট্রো, অর্গানিক অনলাইন, লেইসফিতা, ফোকাস, স্পাইডার ডিজিটাল, আমার শপ, খাসফুড, সাজগোজ, ওয়ালেট মিক্স, ক্রিয়েটিভ আইটি, বইঘর, টিভিএস, সুন্দরবন, সিএক্সপ্রেস, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড, ক্রাফটভিশন, এপকম, সপারু, জেএমএস, ডিবিবিএল, পাঠাও, পেপারফ্লাই, কাবলিওয়ালা, সিন্দবাদ, বাগদুম এবং সিঙ্গারের মতো প্রতিষ্ঠান।
– বিজ্ঞাপ্তি