দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর মুকুল, পরিচর্চায় ব্যস্ত চাষীরা

প্রকাশিত: ৭:৪৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০১৯

ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে ‘লিচুর জেলা’ হিসাবে দেশব্যাপি পরিচিত দিনাজপুর জেলার লিচু গাছের শাখায় শাখায় বের হতে থাকে লিচুর মুকুল। প্রতিটি লিচু বাগানে মুকুল থেকে ফুল ফুটতে শুরু করায় মৌ-মাছির আনাগোনা শুরু হয়েছে। মৌ-মাছি লিচুর এক ফুল থেকে অন্য ফুলের পরাগায়ন শুরু করেছে। লিচু বাগানে এখন মৌ-মাছির গুন গুন শব্দে লিচু বাগানীদের মন সুভাশিত হচ্ছে।

প্রতিটি লিচু গাছের শাখায় শাখায় দুলছে এখন থোকা থোকা মুকুল। বাতাসে দোল খাওয়া লিচু বাগান যেন উত্তাল সাগরের ঢেউ লেগেছে। লিচু গাছে মুকুলের দেখা পাওয়ায় লিচু চাষী ও বাগানিরা পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছে মুকুল ধরে রাখতে গোড়ায় পানি সরবরাহ ও বালাইনাশক প্রয়োগ করছেন তারা।

দিনাজপুরের লিচু রসে ভরা ও সুস্বাদু হওয়ায় এর কদর দেশসহ বিদেশেও রয়েছে। গত কয়েক মৌসুম থেকে দেশের অনেক এলাকায় কমবেশি লিচু চাষ হলেও মানুষের কাছে দিনাজপুরের লিচুর গ্রহণযোগ্যতাই আলাদা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারও দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে বলে আশা করছেন চাষী ও বাগানিরা।

প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় মুকুল। মুকুলের সঙ্গে ফুলে ফুলে মৌ-মাছির গুঞ্জন আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দে এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে।

দিনাজপুর ১৩ উপজেলার মধ্যে সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ ও খানসামা উপজেলার লিচু বিখ্যাত। এসব লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি, কাঠালী লিচু উল্লেখযোগ্য। সদর উপজেলার মাশিমপুর, বিরল উপজেলার মাদবপাটিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় ও আঙ্গিনার লিচু গাছে এবং লিচু বাগানে মুকুল আসতে শুরু করেছে।

লিচু বাগানগুলোতে ফুল আসা থেকে লিচু আরোহণ পর্যন্ত ৩-৪ মাস লিচু বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল আসার ১৫ দিন আগে এবং ফুল আসার ১৫ দিন পরে সেচ দিতে হয়। সেই অনুযায়ী গাছে মুকুর আসার সঙ্গে সঙ্গেই মুকুলকে টিকিয়ে রাখতে লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা স্প্রে করেন। এছাড়াও মুকুল যাতে ঝড়ে না পড়ে সেজন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি ও সার দিয়ে যাচ্ছেন।

দিনাজপুর জেলায় এবার ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হবে এ বছর। জেলার বিরল উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লিচু চাষ হয়। সারাদেশে কম-বেশি লিচুর চাষ হলেও দিনাজপুরের লিচুর কদর আলাদা। জেলা প্রতিবছরই লিচুর চাষ বাড়ছে।

বিরলের লিচু চাষী মতিউর রহমান জানান, লিচুর ফুল আসা শুরু করার সাথেই শুরু করে দিতে হয় পরিচর্যা। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। লিচু গাছে ফুল আসতেই রাজশাহী, রংপুর, চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীরা দিনাজপুরে আসতে শুরু করেছেন। তারা আগাম লিচু বাগান ক্রয় করছেন।

দিনাজপুর মাসিমপুরের লিচু চাষী মোবারক আলী জানান, দিনাজপুরের প্রতিবছর লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এবার পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে লিচু রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখানকার লিচু লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই জেলাতে লিচু চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিত ইকবাল জানান, চলতি বছর দিনাজপুর জেলায় ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপি এই লিচুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এবার দিনাজপুরের লিচু পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হবে। ইতোমধ্যে লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলন ভালো হবে।

তিনি আরোও জানান, কৃষি কর্মকর্তারা চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কখন কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে সে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

 

সুত্র : পূর্ব পশ্চিম