ফল চাষে কালীগঞ্জের ইদ্রিস আলীর সাফল্য গুড নিউজ গুড নিউজ প্রকাশিত: ৮:৩২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০১৯ ৩৫ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের ফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ইদ্রিস আলী। তিনি উপজেলার বলরামপুর গ্রামের সামছদ্দীন লস্করের ছেলে। ৪ ভাইয়ের পৈতৃক সম্পত্তি মাত্র বিঘে খানেক। সংসারের অভাব অভিযোগ ছিল নিত্য সঙ্গী। এক সময় গ্রাম গ্রাম ঘুরে বিভিন্ন দেশি ফল কিনে বাজারে বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে ফলের ব্যাপারীদের ফল কিনে দিয়ে পয়সা রোজগার করে সংসার চালাতেন। এরপর একদিন তিনিও কৃষকদের ফলের বাগান কিনতে শুরু করেন। এখন গ্রামের কৃষকদের জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন ফলের চাষ করছেন। এভাবে বিগত ৩৫ বছর ধরে ফল নিয়ে কারবার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। কখনো আম-লিচু আবার কখনো পেয়ারা লাগিয়ে সফলতা পেয়েছেন কৃষক ইদ্রিস আলী। সরেজমিনে বলরামপুর গ্রামে ইদ্রিস আলীর পেয়ারা বাগানে গেলে দেখা যায় সারি সারি লাগানো রয়েছে পেয়ারা গাছ। গাছগুলো মাটি থেকে আড়াই থেকে ৩ ফুট উঁচু। পেয়ারা বাগানে মোট ৫ জন কৃষি শ্রমিক কাজে লেগে আছেন। কেউ সারা জমি ঘুরে বিক্রয়যোগ্য পেয়ারাগুলো তুলছেন। কেউ ক্ষেতের মাঝের আগাছাগুলো তুলছেন। আবার একজন পেয়ারার নুইয়ে পড়া ডালগুলো তুলে বাঁশের চটার সাথে বেধে উঁচু করে দিচ্ছেন। আর ক্ষেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কৃষি শ্রমিকদের দেখিয়ে সমস্ত কাজ পরিচালনা করছেন ইদ্রিস আলী। ফলচাষী ইদ্রিস আলী বলেন, তারা ৪ ভাই। তাদের মাঠে মাত্র ১ বিঘা জমি আছে। এতোটুকু চাষযোগ্য জমির ফসলে পরিবারের খরচ চালানো কষ্টকর ব্যাপার ছিল। সংসারের অভাব অভিযোগের মধ্য দিয়েই ভাইয়েরা সকলেই পৃথক হয়ে যান। এরপর সংসারের ঘানি টানতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে গ্রাম গ্রাম ঘুরে দেশী বিভিন্ন ফল কিনে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেন। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর শহরের ফল কেনা ব্যাপারীদের চুক্তিতে কিনে দিতে থাকেন। এভাবে কিছু পয়সার মালিক হয়ে শুরু করেন নিজে ফলচাষীদের কাছ থেকে ফলের বাগান কেনা। এভাবে প্রায় ৮ বছর ব্যবসা করেন। এখন নিজে গ্রামের কিছু লোকজনের কাছ থেকে প্রতি বিঘা বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে মোট ১২ বিঘা ফলের চাষ করেছেন। এখন ক্ষেতে ৮ বিঘা পেয়ারা ও ৪ বিঘা আপেল কুল রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিজে ফল চাষের পাশাপাশি আম লিচুর সময়ে লাভজনক মনে করলে চাষীদের নিকট থেকে বাগানের গাছে থাকা অবস্থায় ফল কিনে ব্যবসা করেন। পেয়ারা চাষ সম্পর্কে কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, মাঠে তার নিজের মাত্র ৮ কাঠা চাষযোগ্য জমি আছে। প্রতিবিঘা বাৎসরিক ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে গ্রামের আবু জাফর, মনোয়ারা বেগম, মনা মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে ৫ বছরের মেয়াদে ইজারা নিয়ে ৮ বিঘা জমিতে গোল্ডেন-৮ , থাই-৭, থাই ফারাং-২ জাতের পেয়ারার চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ জাতের ১ হাজার পেয়ারা গাছের ডাল ভারত থেকে গত বছর এনে এখানে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে জমিতে লাগানোর পর ৬ মাসের মধ্যেই ফল এসেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে পেয়ারা বিক্রি করছেন। তিনি আরও জানান, মোট ৮ বিঘা জমিতে পেয়ারা লাগানো থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। পেয়ারা পোকামাকড় থেকে বাঁচাতে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার পেয়ারার পলি ব্যাগ জড়ানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও কমপক্ষে ৪০ হাজার পেয়ারার পলি ব্যাগ ভরার কাজ শুরু হবে এবং এ জাতের পেয়ারাগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু আকারে বেশ বড়। গাছের কিছু পেয়ারা প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। এখনও কিছু ছোট রয়েছে। আবার কিছু কিছু ডালে এখনও ফুল আসছে। তিনি বলেন, দাম এখনকার অবস্থায় থাকলে পেয়ারা থেকে যাবতীয় খরচ বাদে তার কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা লাভ আসবে। কৃষক ইদ্রিস আলির ক্ষেতে পেয়ারার চারা লাগানোর পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ জন করে কৃষি শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এ বাগান থেকে কমপক্ষে ৫ বছর ফল পাবেন। এখন দেশে অনেক জাতের পেয়ারার চাষ হচ্ছে তবে তার এ জাতের পেয়ারাগুলো বেশ মিষ্টি হওয়ায় বাজারে দাম ও চাহিদা বেশি। প্রতি পিস ৪০ টাকা দরে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার কলমের চারার অর্ডার পেয়েছেন। আরও অর্ডার পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। এই পেয়ারার বাগান থেকেই তার জীবনে সাফল্যের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি মনে করছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান, এ উপজেলায় ইদ্রিস আলী একজন প্রতিষ্ঠিত ফলচাষি। তার ফলের বাগানে তিনি গিয়েছেন। কৃষক ইদ্রিস আলীকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। সুত্র : দৈনিক অধিকার SHARES ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়: ইদ্রিস আলীকালীগঞ্জফল চাষসাফল্য 120x600 #StayHome Sale 2020