কক্সবাজারের টেকনাফে ৩৪ কেজির একটি পোয়া মাছ ধরে আট লাখ টাকায় বিক্রি | তিন জেলে এখন লাখপতি |

প্রকাশিত: ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০১৮

কক্সবাজার প্রতিনিধি : হতদরিদ্র ঘরের জন্ম নেওয়া আবদুস সালাম (২৫)। পেশায় জেলে। তিন বোন এক ভাইয়ের সংসার, তার উপরে বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। জেলে পেশায় যা আয় হয়, তাতে কোন রকম পেটে ভাতে চলে তার পরিবার। আবার এমনও দিন আছে, একবেলা খেয়ে, বাকি দুই বেলা না খেয়ে খাওয়ার অভিনয় করতে হয়।

তার তিন বোনের মধ্যে এক বোনের বিয়ে হয়েছে বছর তিনেক আগে। আরেক বোন তাসলিমাকে গত দুই বছর যাবত বর পক্ষ দেখতে আসে আর যায়। টাকার অভাবে বিয়ের পিঁড়িতে আর বসা হয় না। এ নিয়ে সালাম বছর খানিক আগে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছিলেন। তবে এবার একটি পোয়া মাছে বদলে গেলো সালামসহ আরো পাঁচ জেলের গল্প।

মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) ট্রলার মালিক আবদুল গণির নেতৃত্ব তিনিসহ পাঁচ জেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগরে জাল ফেলেন, দুপুরের দিকে জাল তুলতে গেলে সবার চোখ কপালে ওঠে, তাদের জালে যে বিশাল একটি পোয়া মাছ ধরা পড়ে।

জেলে আবদুল গনি জানান, মাছটি নিয়ে আর দেরি না করে দ্বীপের একটি মৎস্য ঘাটে নিয়ে যান। মাছটি ওজন করে দেখতে পান ৩৪ কেজির বেশি। মাছটি কিনতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ফজল করিম ও নুরুল ইসলাম দুজনই প্রতিযোগিতা শুরু করেন। লাখ থেকে শুরু হয়ে লাফে লাফে দাম বেড়ে শেষ পর্যন্ত আট লাখ টাকায় মাছটি কিনে নেন ফজল করিম। ঘন্টার ব্যবধানে ফজল করিম দশ লাখ টাকায় মাছটি বিক্রি করে দেন কক্সবাজারের মহেশখালীর ইসহাক নামের আরেক ব্যবসায়ীদের কাছে।

আর এই একটি মাছে দুই জেলের বোনের বিয়ে নিশ্চিত হয়ে যায়। জেলে আবদুস সালাম বলেন,মাছটি বিক্রি করে ভাগে যে টাকা পেয়েছি এই টাকা দিয়ে আগামী এক সাপ্তহের ভিতরে আমার ছোট বোনের বিয়ে দিতে যাচ্ছি। আমার বোনকে যেন বিয়ে দিতে পারি এ জন্য হয়তো আল্লাহ মাছটি আমাদের জালে পাঠিয়েছেন এবং এত দামে বিক্রি করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

আবদুস সালাম আরো বলেন, আমার আরেক সহযোদ্ধা জেলে নোমানও টাকার অভাবে তার বোনের বিয়ে দিতে না পেরে হতাশা থেকে প্রায়ই সময় বলতেন, সালাম আমার বোনের বিয়ে দিতে বুঝি আমাকে ইয়াবা পাচার করতে হবে? না হয় বিয়ে দিতে পারবো না! সালাম জানান, তার বোনের বিয়ের জন্য আজ ১৪ নভেম্বর দুপুরের দিকে ৫০ হাজার টাকা বরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোমান বলেন, আমাদের দুই সহযোদ্ধার বোনের বিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহ্ আমাদের জালে মাছটি পাঠিয়েছিলেন।

প্রত্যক্ষকারী টেকনাফের স্থানীয় সাংবাদিক মো. আমিন জানান, শুধু দুই জেলের বোনের বিয়ে নয়। একটি মাছের কারণে বাকি তিন জেলে এখন লাখপতি। তা ছাড়া যিনি প্রথমে কিনেছিলেন, সেই আবদুস করিমও দুই লাখ টাকা মুনাফা করেছেন।

টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, যতটুকু জানা যায়, পোয়া মাছের বায়ুথলি বা এয়ার ব্লাডারের কারণে মাছটির অত্যধিক মূল্য। এয়ার ব্লাডার দিয়ে বিশেষ ধরনের অপারেশনাল সুতা তৈরি হয় বলে মাছটির এত দাম বলে তিনি শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।